মহান আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর সুদকে করেছেন হারাম। সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য রেখেছেন দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা। নবুয়তপ্রাপ্তির আগে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-ও ছিলেন একজন সৎ ও সফল ব্যবসায়ী। তিনি তাঁর উম্মতকে সৎ উপায়ে হালাল পদ্ধতিতে ব্যবসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এবং ব্যবসাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপদেশও দিয়েছেন। আজকে আমরা তেমন কয়েকটি উপদেশ তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। ব্যবসায় সততা অবলম্বন : রাসুল (সা.) ব্যবসায়ীদের সর্বদা সততা অবলম্বনের প্রতি তাগিদ দিতেন। সৎ উপায়ে ব্যবসার প্রতিদান ও অসৎ উপায়ে ব্যবসার ক্ষতি সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করতেন।
ইসমাঈল ইবনে উবাইদ ইবনে রিফাআ (রা.) থেকে পালাক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র থেকে বর্ণিত, তিনি (রিফাআ) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ঈদের মাঠে রওনা হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের কেনা-বেচায় জড়িত দেখে বলেন, ‘হে ব্যবসায়ীরা!’ তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ডাকে সাড়া দিল এবং নিজেদের ঘাড় ও চোখ উঠিয়ে তাঁর দিকে তাকাল। তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ফাসিক বা গুনাহগাররূপে উঠানো হবে; কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং সততা ধারণ করে, তারা এর ব্যতিক্রম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১২১০) নম্রতা অবলম্বন করা : ক্রেতাদের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করা ব্যবসায় সফল হওয়ার অন্যতম সূত্র।
প্রিয় নবী (সা.) ব্যবসায়ীদের ক্রেতাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার উপদেশ দিয়েছেন। এমনকি পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব নম্র ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছেন। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন যে নম্রতার সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে চায়।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৭৬) মানুষের হক আদায়ে যত্নবান হওয়া : অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন পাওনাদার বা সাপ্লাইয়ারদের ঋণ পরিশোধে অযথা বিলম্ব করে, যা মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। তাই প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতদের উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম মানুষ, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।’
(বুখারি, হাদিস : ২৩৯৩) বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের (অনুরোধে তার) সঙ্গে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করবে, আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৬০) দরদাম করার সুযোগ দেওয়া : অনেক বিক্রেতা ক্রেতার দরদামে বিরক্ত হয়। কিন্তু রাসুল (সা.) ক্রেতাদের দরদাম করার সুযোগ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এবং তিনি নিজেও দরদাম করে পণ্য ক্রয় করতেন। সুয়াইদ ইবনে কাইস (রা.) বলেন, হাজার নামক জায়গা থেকে আমি ও মাখরাফা আল-আবদি (রা.) কিছু কাপড় আমদানি করলাম। নবী (সা.) আমাদের কাছে এলেন। তিনি আমাদের কাছ থেকে একটি পায়জামা কেনার জন্য দামাদামি করেন। আমাদের কাছেই একজন কয়াল (পরিমাপক) উপস্থিত ছিল।
পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সে ওজন করে দিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) (দ্রব্যের মূল্য পরিশোধকালে) কয়ালকে বলেন, ‘ওজন করো এবং কিছুটা বেশি দাও।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩০৫) ওজনে কম না দেওয়া : ব্যবসার ক্ষেত্রে ওজনে কম দেওয়া মানুষের হক নষ্টের শামিল। তাই প্রিয় নবী (সা.) যথাযথভাবে ওজন করে জিনিস বিক্রির তাগিদ দিয়েছেন, সম্ভব হলে কিছুটা বেশি দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। ওপরে উল্লিখিত হাদিসেই রাসুল (সা.) বলেন, ‘ওজন করো এবং কিছুটা বেশি দাও।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩০৫) অভাবী ঋণগ্রস্তকে সুযোগ দেওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবী ঋণগ্রস্তকে সুযোগ প্রদান করে অথবা ঋণ মাফ করে দেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় প্রদান করবেন, যেদিন তাঁর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩০৬)
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।